অন্যান্য - Others

বটতলা

আজকে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি  হরর ঘটনা শুনাব-

আমি তখন ভোলা গোরস্থান মাদরাসায় পড়ি ৷ মাদরাসা থেকে বৃহস্পতিবার বিকালেই বাড়িতে যাই। কারন ছুটি পাই কম আবার চিন্তা করি রাত্রে চলে গেলে পরদিন সকালটা বাসা থেকেই শুরু করা যাবে। ছাত্র অবস্থায় ক্লাস শেষ করেই রওনা হয়ে যেতাম। বাড়িতে যেতে আড়াই/ তিন ঘন্টা লেগে যায় ৷

এক বৃস্পতিবার আসরের পর বাড়ী রওনা হলাম। উদয়পুর রাস্তার মাথায় বাসটা নষ্ট হয়ে গেল ৷ এটাই ছিল লাষ্ট বাস ৷ বাস ঠিকঠাক করে আমাদের বাজার চরফ্যাশনে যেতে যেতে রাত ১১ টা বেজে গেল। বাজার টাও একটু নিঝুম হয়ে গিয়েছে ৷ লোকজন তেমন নেই ৷ অনেক দোকানীরা চলে গেছে ৷ যারা আছে তাদের মধ্যে অনেকেরাই যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ৷ চরফ্যাশন বাজার থেকে বাড়ী যেতে রিক্সা দিয়ে দশ মিনিট লাগে ৷ অনেক খোজার পর একটি রিক্সা ডবল ভাড়া দিয়ে উঠে পরলাম ৷ খালপাড়ের রোডটি দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে রিক্সা ৷ এ রোডটি নিঝুম এবং অন্ধকার ,একটু অন্য রকম মনে হয় ৷ গরু হাটের কোনার টহল ঘরে বসে  বসে আছে  হাসনাইন। আমার বাল্য বন্ধু । আমাকে দেখেই বলল আমরা তো প্রতি সাপ্তাহে রাত্রে বটতলা স্কুলের সামনে অনুষ্ঠান করি করি, তুই ভাত খেয়ে চলে আসিস ৷

 বাসায় গিয়ে আম্মার সাথে কথা বলতে বলতে খাওয়া শেষ করলাম।১২টার দিকে টহল ঘরে কাউকে না পেয়ে ভাবলাম সবাই হয়তো চলে গেছে। আমি আমি একাই  বটতলা রওনা হলাম। গরু হাট থেকে পশ্চিম দিকে আধা কিমি সেখান থেকে দক্ষিনে আধা কিমি দুরুত্বে বটতলা ৷ 

তখন আষাঢ় মাস। আকাশে চাদও আছে। কিন্তু আষাঢ়ের মেঘ এবং চাদের আলো দুইটা মিলে একটা অদ্ভুদ আলো-আধারের খেলা চলছে- এই কালো অন্ধকার, আবার যেন ভরা পূর্ণিমা। কিছুটা ভয়ও লাগছে। এমন রাতে একা একা হাটলে ভূত-প্রেতের কথা একটু বেশীই মনে পড়ে।

বামের ঘন জঙ্গল থেকে ঝি ঝি পোকার শব্দে একটা অদ্ভুদ সুর যেন সৃষ্টি হচ্ছে। যে সুরের তালে তালে নিজেকে নিয়ে খুব হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। মাঝে মাঝে গভীর জঙ্গল থেকে দু-একটি কাক বড্ড বেসুরো কন্ঠে কা কা করছে। মনে হচ্ছে কোন মাংসখেকো রাক্ষস যেন কলিজাটা ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে।

আমি বটতলার কাছাকাছি যে জায়গায় শশানঘাটটা ঠিক সে জায়গায় চলে আসলাম। এইখান থেকে আমাদের যে জায়গায় অনুষ্ঠান হওয়ার  কথা সেই জায়গা টা স্পষ্ট দেখা যায়। আমি কাউকেই দেখতে পেলাম না। মনের ভিতর একটা ভয়ও জেগে উঠল। এই কারনে গভীর জঙ্গলের পাশ দেয়ে পিছনেও যেতে ইচ্ছে করছেনা। কারন এই জায়গার বামদিকে হিন্দুদের হোগলা পাতার জমিন, আর ডানদিকে খোলা মাঠ – যার ধরুন গা শিরশির করা অন্ধকার ভাবটা এইখানে নেই।

আমি সোজা বটতলা গিয়ে স্কুলের ছাদে উঠলাম ৷ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। ভয়টা কাটানোর জন্য একটু জোড় করেই যেন অন্যমনস্ক হয়ে যেতে চাইলাম। মাঝে মাঝে কয়েকটা  আকাশে চিল উড়ে যাচ্ছে। মৃত প্রাণীর গন্ধে বমি হওয়ার অবস্থা। আমাকে নিদ্রার সাথে যুদ্ধ করতে হচ্ছে ৷ আস্তে আস্তে ঘুমের ঘোড়ে ঢলে পরলাম ৷

হঠাৎ……হঠাৎ………..একটি কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম। ইঁ..ইঁ..ইঁ..ইঁ..ইঁ..ইঁ..। কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। আমার কাছ থেকে হাত বিশেক দূরে ঠিক আমার বাম দিকে তাকিয়ে দেখি একটি ঘোমটা দেওয়া মহিলা বসে আছে। আর ঐ খান থেকেই কান্নার আওয়াজ আসছে। ভয়ে আমার আত্না চলে যাওয়ার যোগাড়। শরীর দিয়ে ঘাম পানির মত বের হচ্ছে। যেন আমি কোন ঝড়নার নিচে দাড়িয়ে আছি। আমাকে ডাক দিয়ে বললো বাবু তুমি ভয় পেয়ো না ৷ আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না ৷ তোমার মাকে আমার পক্ষ থেকে সালাম জানাবে ৷ আর বলবে আপনার কৃতকর্মের জন্য  সুমাইয়া মেডাম খুশি হয়েছে ৷

পাখির কিচিমিচর ডাকে আমার ঘুম ভাঙলো ৷ একটু ভয়ে ছাদ থেকে নেমে বাসায় গেলাম ৷ অজু করে ফজরের কাযা নামাজ পড়লাম।  আম্মাকে সব ঘটনা খুলে বললে আম্মা বলল হাসনাইন তো তার নানা বড়ী গিয়েছিল তিনদিন আগে, সেতো আসবে তার ছোট খালার বিবাহের পরে। আমিতো অবাক তাহলে হাসনাইনের চেহারা নিয়ে আমাকে কে বলেছিল বটতলা যাওয়ার জন্য।

শেষে আম্মা যা বলেছিল তা ছিল এইরকম-“ আমি তখন বটতলা স্কুলে ফাইভে পড়ি ৷ বটতলা স্কুলের নববিবাহিতা সুমাইয়া মেডাম ৷ কি প্রয়োজনে যেন স্কুলের  ছাদে উঠেছিল ৷ তখন ঠিক দুপুর ৷ সকল ছাত্র- ছাত্রীরা পরীক্ষার হলে ৷ হঠাৎ একটা বিকট আওয়াজ হলো এবং কিছু নিচে পড়ার আওয়াজ হলো ৷ আমরা কিছু মনে করিনি তাতে কেননা সময় কম লিখা অনেক বাকি ৷ আমরা লিখতেই রয়েছি ৷ এক মিনিটের মাথায় সুবাস স্যার বিতরে প্রবেশ করে বললো তোমাদের সুমাইয়া মেডাম আত্নহত্যা করছে ৷ আমরা দৌড়িয়ে নিচে নামলাম ৷ রক্তত অবস্থায় দেখে আমরা সকলে হাউমাউ করে কেদে উঠলাম ৷ কিছু পর যখন আমার হুশ ফিরে এলো তখন দেখলাম সোনালী কালার কলমটি যেটা দিয়ে মেডাম নিচে পরার ত্রিশ মিনিট আগে আমার খাতায় সাইন করলো সুবাস স্যার ৷ আমার সামনে সব কিছু স্পষ্ট হতে থাকলো ৷ আমি অনেক সময় দেখতাম/ বুঝতাম  সুমাইয়া মেডামের সাথে সুবাস স্যার খারাফ কাজ করতে চাইতো কিন্তু মেডাম রাজি হতেন না ৷ আজও মনে হয় কিছু একটা করতে চেয়ে ছিল, রাজি না হওয়াও হয়তো ধর্ষন করেছে ৷ এই পাপের গ্লানি সহ্য করতে না পেরে আত্নহত্যা করেছে, এবং পাপিকে শাস্তি দিতে তার কলম নিয়েই ঝাপ দিয়েছে ৷ পরবর্তিতে আমি সবার কাছে আসল ঘটনা প্রকাশ করলাম ৷  সুবাস স্যারকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে ৷আর তার পরিবারের লোকেরা লজ্জায়  জায়গা জমিন বিক্রি করে ভারত পারি জমিয়েছে ৷ তার পর থেকে সুমাইয়া মেডাম কে লোকেরা মাঝে মাঝে দেখতো ঘোমটা পড়া অবস্থায় ৷ কিন্তু কাউকে ভয় দেখাতো না ৷

author-avatar

About MD Naim

আমি মুহাম্মাদ নাঈম। আমি ডিজিটাল প্রডাক্ট ও সার্ভিস প্রদান করে থাকি। আমার দৈনন্দিন জীবনের আপডেট গুলো এখানে প্রকাশ করে থাকি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।